কুয়েত বিমানবন্দরে নগদ টাকা ও স্বর্ণ বহন করছেন? নতুন নিয়ম না মানলে বিপদ! যা জানা জরুরি

0

কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারকারী সকল ভ্রমণকারীদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা জারি করেছে দেশটির জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফ কাস্টমস। সম্প্রতি "নিরাপদে ভ্রমণ করুন" (Travel Safe) শিরোনামে একটি জনসচেতনতামূলক প্রচারাভিযান শুরু করা হয়েছে, যার অধীনে কুয়েতে আগমন এবং কুয়েত থেকে বহির্গমনকারী সকল যাত্রীকে তাদের সাথে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণ এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ঘোষণা করার নিয়ম সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে। এই নিয়ম না মানলে ভ্রমণকারীরা বড় ধরনের আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন, যার মধ্যে রয়েছে মালামাল বাজেয়াপ্ত হওয়া থেকে শুরু করে জেল-জরিমানা পর্যন্ত।

নতুন নিয়মটি আসলে কী? কুয়েতের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারি করা নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, যেকোনো যাত্রী (কুয়েতি নাগরিক বা প্রবাসী) কুয়েত বিমানবন্দরে প্রবেশ বা প্রস্থানের সময় যদি তার সাথে ৩,০০০ কুয়েতি দিনার বা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ বা মূল্যবান সামগ্রী থাকে, তবে তা অবশ্যই কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে ঘোষণা করতে হবে।

এই নিয়মের আওতায় যে সকল সামগ্রী পড়বে:

  • নগদ অর্থ (কুয়েতি দিনার বা যেকোনো বিদেশি মুদ্রা)

  • স্বর্ণের বার বা যেকোনো মূল্যবান ধাতু

  • দামি পাথর (যেমন হীরা, রুবি ইত্যাদি)

  • অন্যান্য বহনযোগ্য মূল্যবান দলিল বা বস্তু (Bearer Negotiable Instruments) যা সহজে হস্তান্তরযোগ্য।

এই নিয়মটি বিমানবন্দরে আগমন এবং বহির্গমনকারী উভয় যাত্রীর জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য।

কেন এই কঠোর নিয়ম জারি করা হলো? কুয়েত সরকারের এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ করা। কুয়েতের ২০১৩ সালের ১০৬ নম্বর আইন (Law No. 106 of 2013) অনুযায়ী, অবৈধ অর্থের লেনদেন এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন একটি গুরুতর অপরাধ। এই আইনের বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখার অংশ হিসেবেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এই সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান শুরু করেছে। এর মাধ্যমে কুয়েত বিশ্ব দরবারে নিজেদের আর্থিক ব্যবস্থার সুরক্ষা এবং স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে চায়।

নিয়ম না মানলে কী পরিণতি হতে পারে? অনেক প্রবাসী ছুটির সময় দেশে যাওয়ার পথে পরিবারের জন্য স্বর্ণালংকার বা জমানো নগদ অর্থ নিয়ে যান। আবার অনেকে কুয়েতে ফেরার সময়ও সাথে করে ডলার বা অন্য মুদ্রা নিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সীমার বেশি অর্থ বা মূল্যবান সামগ্রী ঘোষণা না করা হলে তা গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এর পরিণতি হিসেবে: ১. সম্পূর্ণ অর্থ বা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত: ঘোষণা না করা সমস্ত নগদ অর্থ, স্বর্ণ বা মূল্যবান বস্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বাজেয়াপ্ত করতে পারে। ২. আইনি ব্যবস্থা: অভিযুক্ত যাত্রীর বিরুদ্ধে কুয়েতের অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হতে পারে। ৩. জেল ও জরিমানা: অপরাধ প্রমাণিত হলে, অভিযুক্ত ব্যক্তির জেল এবং বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানা হতে পারে।

কীভাবে ঘোষণা করবেন? যদি আপনার কাছে ৩,০০০ কুয়েতি দিনার বা তার বেশি মূল্যের নগদ অর্থ বা স্বর্ণ থাকে, তবে আপনাকে বিমানবন্দরে কাস্টমস ডেস্কে গিয়ে নির্দিষ্ট "কাস্টমস ডিক্লারেশন ফর্ম" পূরণ করতে হবে। এই ফর্মে আপনার সাথে থাকা অর্থ বা সামগ্রীর সঠিক বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। এতে কোনো ধরনের লুকোচুরি বা মিথ্যা তথ্য প্রদান করা থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে, কারণ সেটিও একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

উপসংহার: কুয়েত প্রবাসী এবং কুয়েত ভ্রমণকারী সকল বাংলাদেশীর জন্য এই নিয়মটি জানা এবং মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। সামান্য অসচেতনতার কারণে বড় ধরনের আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই, বিমানবন্দরে ভ্রমণের পূর্বে নিজের সাথে থাকা নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর হিসাব রাখুন এবং নির্ধারিত সীমার বেশি হলে তা সততার সাথে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে ঘোষণা করুন।

সচেতন থাকুন, নিরাপদে ভ্রমণ করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!