হৃদয় এখন বাংলাদেশের নায়ক

0

প্রতারিত হয়ে ক্রিকেট ছাড়তে চাওয়া হৃদয় এখন বাংলাদেশের নায়ক

টি-টোয়েন্টি অভিষেক মনে রাখার মতো না হলেও ওয়ানডেতে স্বপ্নের শুরু হয়েছে হৃদয়ের, খেলেছেন ৯২ রানের ঝলমলে ইনিংস। তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেকে হাফ সেঞ্চুরি করা হৃদয়ের ইনিংসটিই সর্বোচ্চ। দলের বিশাল জয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা, অভিষেকে ম্যাচসেরা হওয়া বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যানও তিনি।

সাত বছর বয়সেই ক্রিকেটের প্রেমে এতোটা মজেছিলেন তাওহিদ হৃদয় যে, বাড়ির পাশের মাঠে ক্রিকেট নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা মেতে থাকতেন। ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর বগুড়ায় জন্ম নেয়া এই ব্যাটসম্যান বড় ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৩ সালে ঢাকায় এসে প্রতারিত হন। বনশ্রীর একটি ভুয়া ক্রিকেট ক্লাবে ভর্তি হয়ে বেশ কিছু টাকা গচ্ছা দিতে হয় তাকে। তখন ক্রিকেটই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন হৃদয়। 

যদিও থামেনি তার পথচলা, কোনো কিছুই বাধা হতে পারেনি। মায়ের অনুপ্রেরণায় ছুটে চলা হৃদয় জায়গা করে নেন যুব দলে। শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে অংশ নেয়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২০১৮ যুব বিশ্বকাপ খেলেন। দ্বিতীয় মিশনে হন বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেট, সর্বশেষ বিপিএলে আলো ছড়িয়ে সোজা জাতীয় দলে।

টি-টোয়েন্টি অভিষেক মনে রাখার মতো না হলেও ওয়ানডেতে স্বপ্নের শুরু হয়েছে তার। শনিবার সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকেই খেলেছেন ৯২ রানের ঝলমলে ইনিংস। তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেকে হাফ সেঞ্চুরি করা হৃদয়ের ইনিংসটিই সর্বোচ্চ। দলের বিশাল জয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরা, অভিষেকে ম্যাচসেরা হওয়া বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যানও তিনি। স্বপ্নের শুরুর দিনে সংবাদ সম্মেলনে এসে মন খারাপের দিনের কথা এলো আলোচনায়, হৃদয় অবশ্য হাসিমুখেই জানিয়ে গেলেন সব। 

কঠোর অধ্যাবসায়ে নিজেকে নতুন রূপ দেওয়া বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান বলেন, 'যখন একাডেমিতে গিয়েছিলাম, অনেক কিছু আসলে ক্ষতি করেই গিয়েছিলাম। তারপর একটা সময় ক্রিকেট খেলার কোনো ইচ্ছা ছিল না। পরিবার থেকে ওভাবে কোনো সাপোর্ট ছিল না। বাবার সাপোর্ট ছিল, যদিও বাবা খেলা বোঝেন না। আমি যখন জেদ ধরতাম মায়ের সঙ্গে, যতোটুকু পেরেছেন, চেষ্টা করেছে। একটা সময় আমার খেলার ইচ্ছে ছিল না। সে সময় সুজন স্যার আসলে সেই ছোট বেলাতেই, যখন আমি অনূর্ধ্ব-১৬ খেলি, সুজন স্যার ওখান থেকে নিয়ে এসেছেন এবং উনি আসলে সুযোগ করে দিয়েছেন। ওখান থেকে প্রথম বিভাগ খেলে আস্তে আস্তে ওখান থেকেই উঠে আসা।'

বিপিএলে আলো ঝরিয়ে জাতীয় দলে ডাক পান হৃদয়, খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান তারা বাবা-মা। মায়ের খুশি একটু বেশিই। হৃদয়ের ভাষায়, 'অবশ্যই প্রতিটা বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়াই ভালো হওয়ার কথা। আমার বাবা-মাও খুশি হয়েছেন। আমার মা বিশেষ করে একটু বেশি খুশি হয়েছে। উনি তো ছোটবেলা থেকেই আমাকে অন্যভাবে দেখেছেন। পরিবার থেকে পড়াশোনার জন্য সব সময় চাপ দিতো, পড়াশোনার দিকে বেশি মনোযোগী ছিলাম না। যতটুকু পেরেছি, বেশির ভাগ সময় মাঠেই থাকতাম। আলহামদুলিল্লাহ, বাবা-মা খুশি হয়েছেন, আশেপাশের আত্মীয়-স্বজনরাও খুশি।'

মুশফিককে আদর্শ মানা হৃদয় জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নও দেখা শুরু করেন তার কারণে। সেই স্বপ্নেরও কথা শোনালেন তিনি। হৃদয় বলেন, 'মুশফিক ভাই… আমি অনেক ছোট ছিলাম, ২০০৭ এর একটা কাহিনী। মুশফিক ভাই বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জিতে একটা স্টাম্প পেয়েছিলেন। তখন আমি অনেক ছোট, একদিন স্টেডিয়ামে গিয়েছিলাম। একটা প্রোগ্রামে মুশফিক ভাইয়ের কাছে যখন স্টাম্প দেখি, তখন থেকেই অনেক অনুপ্রাণিত হই। ওখান থেকেই ইচ্ছা ছিল, যদি একদিন খেলতে পারি জাতীয় দলে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!