স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেতৃত্বের লড়াইয়ে জিতেছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত হামজা ইউসেফ। দলে এই জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জেনের স্থলাভিষিক্ত হতে চলেছেন।
সোমবার বিজয়ী ঘোষণার পর উচ্ছ্বসিত ইউসেফ বলেন, ‘‘আমি স্কটল্যান্ডের সবার ফার্স্ট মিনিস্টার হব। আমি প্রতিটি দিনের প্রতিটি মিনিট আপনাদের সম্মান ও আস্থা অর্জন এবং পুনরায় অর্জনের জন্য কাজ করে যাব।”
সিএনএন জানায়, চূড়ান্ত ভোটে ৫২ শতাংশের রায় পেয়ে জিতেছেন ইউসেফ। তিনি স্কটিশদের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন।
এছাড়াও তিনি তার ভোটের প্রচারে যে বিষয়গুলোকে সামনে এনেছেন তার মধ্যে অন্যতম, জীবনযাত্রার ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতির সংকট মোকাবেলা, পুনরায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান, লিঙ্গ রূপান্তর নিষিদ্ধ করণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের দিকে অগ্রসর হওয়া।
বিজয়ী ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রথমেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয়ে যে সংকট দেখা দিয়েছে সেই ক্ষতি থেকে স্কটল্যান্ডের প্রতিটি মানুষকে যতদূর সম্ভব রক্ষা করার জন্য কাজ করবো। আমরা জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (এনএইচএস) এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পরিষেবাগুলি পুনরুদ্ধার করবো এবং আমাদের কল্যাণমূলক অর্থনীতিকে সমর্থন করবো, যাতে দেশজুড়ে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হয়।”
২০১৬ সাল থেকে স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টের গ্লাসগো পোলোকের সদস্য ইউসেফ। তিনিই প্রথম মুসলিম ও অশ্বেতাঙ্গ কেবিনেট মন্ত্রী যিনি স্কটল্যান্ড সরকারের হয়ে কাজ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘‘ফার্স্ট মিনিস্টার হয়ে আমাদের দেশের জন্য কাজ করা সুযোগ পাওয়া আমার জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি এবং এটা আমার জন্য দারুণ সম্মানের।”
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এসএনপি’র নেতা হতে গত ছয় সপ্তাহ ধরে ইউসেফ এবং আরো দুই প্রার্থী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। যে প্রচারে প্রত্যেক প্রার্থী একে অন্যকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে গেছেন। শেষ পর্যন্ত সোমবার বিকালে এডিনবরার মারেফিল্ড রাগবি গ্রাউন্ডে ইউসফের বিজয়ের ঘোষণা আসে।
ইংল্যান্ডের সঙ্গে তিন শতাব্দী পুরানো সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রত্যয় নিয়ে এসএনপির দায়িত্ব গ্রহণ করছেন ইউসেফ। পাকিস্তানি বাবা আর কেনীয় মায়ের সন্তান ইউসেফের জন্ম গ্লাসগোতে।
সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী এখনো প্রতি ১০জন স্কটিশের মধ্যে চারজন স্বাধীনতার পক্ষে।
বিদায়ী স্টার্জনও তার প্রথম মেয়াদে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। যদিও স্বাধীনতার প্রশ্নে সর্বশেষ গণভোটের ফল তার বিপক্ষে গিয়েছিল। ২০১৪ সালের ওই গণভোটে ৫৫ শতাংশ ভোটার ‘না’ এর পক্ষে ভোট দেন। ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে পেড়ে ৪৫ শতাংশ ভোট।
এখন আবার নতুন করে গণভোট আয়োজনের কথা বলা হচ্ছে। ইউসেফ ওই গণভোটের জন্য স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারে কী ধরণের কৌশল নেবেন তা এখনো জানা যায়নি।
এ মাসে হওয়া জনমত জরিপে দেখা গেছে, ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে সমর্থন আরো কমে ৩৯ শতংশ হয়েছে। বেড়েছে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগাদের সংখ্যা।
ইউসেফের নেতৃত্বের বিষয়ে আগামী মঙ্গলবার স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্টে ভোট হবে। যদি সেখানে তিনি জিতে যান তবে পরদিন বুধবার তিনি স্কটল্যান্ডের নেতা হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন।