কুয়েতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া: নতুনদের জন্য সম্পূর্ণ গাইড

0

কুয়েতে বসবাসকারী প্রবাসীদের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা একটি বড় সুবিধা। এটি কেবল ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতীকই নয়, অনেক ক্ষেত্রে এটি ভালো চাকরির সুযোগও তৈরি করে দেয়। তবে কুয়েতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়াটি বেশ কিছু নিয়মকানুন এবং ধাপের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করতে হয়। বিশেষ করে নতুন প্রবাসীদের জন্য এই প্রক্রিয়াটি কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। আজকের এই পোস্টে আমরা কুয়েতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, আবশ্যকীয় কাগজপত্র এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে আলোচনা করব, যাতে আপনি সহজেই আপনার লাইসেন্সটি পেতে পারেন।

ধাপ ১: যোগ্যতা যাচাই করা (Eligibility Criteria) কুয়েতের ট্রাফিক আইন অনুযায়ী, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে। এই শর্তগুলো হলো:

  • বৈধ আকামা: আপনার অবশ্যই কুয়েতের একটি বৈধ আকামা (রেসিডেন্সি পারমিট) থাকতে হবে এবং লাইসেন্সের আবেদন করার সময় আকামার মেয়াদ কমপক্ষে দুই বছর থাকতে হবে।

  • বেতন (Salary): আপনার মাসিক বেতন কমপক্ষে ৬০০ কুয়েতি দিনার হতে হবে, যা আপনার কাজের অনুমতিপত্র বা ইজনে আমালে উল্লেখ থাকতে হবে। (দ্রষ্টব্য: নির্দিষ্ট কিছু পেশার ক্ষেত্রে এই শর্ত শিথিলযোগ্য)।

  • শিক্ষাগত যোগ্যতা: আবেদনকারীর কমপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারী হতে হবে। (কিছু পেশার জন্য ব্যতিক্রম রয়েছে)।

  • পেশা (Profession): নির্দিষ্ট কিছু পেশার (যেমন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, ম্যানেজার ইত্যাদি) প্রার্থীরা বেতনের শর্ত পূরণ না করলেও আবেদন করার সুযোগ পান।

  • বয়স: আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।

ধাপ ২: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করা আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করার আগে আপনাকে নিম্নলিখিত ডকুমেন্টগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে:

  • পাসপোর্ট এবং সিভিল আইডির মূল কপি ও ফটোকপি।

  • আকামার ফটোকপি।

  • কাজের অনুমতিপত্র বা ইজনে আমালের কপি (যেখানে আপনার বেতন উল্লেখ আছে)।

  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট (নিজ দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কুয়েতের দূতাবাস দ্বারা সত্যায়িত)।

  • ব্লাড গ্রুপ সার্টিফিকেট।

  • আপনার স্পন্সর বা কোম্পানির NOC (No Objection Certificate) বা অনাপত্তিপত্র।

  • সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি (সাধারণত নীল ব্যাকগ্রাউন্ড)।

  • চোখের ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট (Eye Test Report)।

ধাপ ৩: লার্নার্স পারমিটের জন্য আবেদন (ইস্তেখরাজ) সকল কাগজপত্র প্রস্তুত হয়ে গেলে, আপনাকে আপনার এলাকার ট্রাফিক বিভাগে (Muroor) যেতে হবে।

  1. সেখানে গিয়ে একটি আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।

  2. আপনার সকল ডকুমেন্ট জমা দিন। কর্মকর্তারা আপনার যোগ্যতা এবং কাগজপত্র যাচাই করবেন।

  3. সবকিছু ঠিক থাকলে, আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে বলা হবে (সাধারণত ১০ দিনার)।

  4. ফি জমা দেওয়ার পর আপনাকে একটি লার্নার্স পারমিট বা ইস্তেখরাজ দেওয়া হবে এবং কম্পিউটার পরীক্ষার (থিওরি টেস্ট) জন্য একটি তারিখ দেওয়া হবে।

ধাপ ৪: কম্পিউটার বা থিওরি পরীক্ষা (Kanoon Test) এটি লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়ার প্রথম পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় ট্রাফিক সাইন, সিগন্যাল এবং রাস্তার সাধারণ নিয়মকানুন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়।

  • প্রস্তুতি: পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন বই এবং মোবাইল অ্যাপ পাওয়া যায়। ট্রাফিক বিভাগের আশেপাশে অনেক টাইপিং সেন্টার থেকেও আপনি পরীক্ষার জন্য স্টাডি ম্যাটেরিয়াল সংগ্রহ করতে পারেন।

  • পরীক্ষা: পরীক্ষায় সাধারণত ২০টি প্রশ্ন থাকে এবং পাস করার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক সঠিক উত্তর দিতে হয়। আপনি আরবি বা ইংরেজি ভাষায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

  • ফলাফল: পরীক্ষায় পাস করলে আপনি ড্রাইভিং টেস্ট বা ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

ধাপ ৫: ড্রাইভিং টেস্ট (ব্যবহারিক পরীক্ষা) থিওরি পরীক্ষায় পাস করার পর আপনাকে ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য একটি তারিখ দেওয়া হবে। এটিই চূড়ান্ত পরীক্ষা, যেখানে একজন পুলিশ কর্মকর্তার সামনে আপনাকে গাড়ি চালিয়ে দেখাতে হবে।

  • প্র্যাকটিস: আপনি কোনো ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়ে অনুশীলন করতে পারেন অথবা পরিচিত কারো সাহায্যে ভালোভাবে প্র্যাকটিস করে নিতে পারেন।

  • পরীক্ষা: পরীক্ষার সময় আপনাকে পার্কিং (সমান্তরাল, ৯০ ডিগ্রি), স্লোপ বা ঢালে গাড়ি চালানো এবং রাস্তার সাধারণ নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর দক্ষতা দেখাতে হবে।

  • ফলাফল: এই পরীক্ষায় পাস করলে আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবেন।

ধাপ ৬: লাইসেন্স সংগ্রহ করা ড্রাইভিং টেস্টে পাস করার পর আপনাকে পুনরায় ট্রাফিক বিভাগে গিয়ে নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। এরপর আপনার ছবি তুলে এবং বায়োমেট্রিক তথ্য নিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ডটি দিয়ে দেওয়া হবে।

উপসংহার: কুয়েতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ এবং ধৈর্য্যের বিষয়। কিন্তু সঠিক তথ্য জানা থাকলে এবং নিয়মকানুন মেনে চললে আপনি সহজেই সফল হতে পারবেন। আরও বিস্তারিত এবং আপডেট তথ্যের জন্য কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!