(ভূমিকা: চেয়ারম্যানের বার্তা)
প্রিয় অংশীদার, বিনিয়োগকারী এবং শুভানুধ্যায়ীগণ,
আমি অত্যন্ত গর্ব এবং আনন্দের সাথে "বাংলাদেশ ফার্মা পিএলসি" (আমাদের দেশের সমগ্র ঔষধ শিল্পের একটি সম্মিলিত প্রতীক)-এর পক্ষ থেকে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনটি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। এই বছরটি ছিল আমাদের জন্য এক অসাধারণ সাফল্য এবং অর্জনের বছর। আমরা কেবল আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা পূরণ করেই ক্ষান্ত হইনি, বরং বিশ্বজুড়ে ১৫০টিরও বেশি দেশে 'মেড ইন বাংলাদেশ' ট্যাগের অধীনে উচ্চমানের ঔষধ পৌঁছে দিয়ে দেশের জন্য সম্মান এবং বৈদেশিক মুদ্রা বয়ে এনেছি।
আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল কয়েক দশক আগে, যখন দেশের প্রায় সমস্ত ঔষধই ছিল আমদানি-নির্ভর। আজ, আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি যে, আমাদের শিল্প দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশই উৎপাদন করতে সক্ষম। এটি আমাদের আত্মনির্ভরশীলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমাদের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে আমাদের দক্ষ ফার্মাসিস্ট, বিজ্ঞানী, কর্মী এবং সরকারের সহায়ক নীতি।
এই প্রতিবেদনে, আমরা আমাদের গত বছরের পারফরম্যান্স, আমাদের শক্তি, আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার একটি বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরব। আমাদের লক্ষ্য একটিই—বিশ্বের প্রতিটি কোণায় সাশ্রয়ী এবং মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া এবং বাংলাদেশকে গ্লোবাল ফার্মাসিউটিক্যালস ম্যাপে একটি অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
আর্থিক এবং কর্মক্ষমতার পর্যালোচনা (Performance Review: 2024-2025)
অভ্যন্তরীণ বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্য:
আমরা দেশের মোট ঔষধের চাহিদার ৯৮% পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি, যা আমদানি নির্ভরতা নাটকীয়ভাবে কমিয়ে এনেছে।
অ্যান্টিবায়োটিক, ভ্যাকসিন, ইনসুলিন এবং ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের ঔষধ দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে, যা রোগীদের জন্য চিকিৎসা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে।
রপ্তানি বাজারে ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি:
আমাদের রপ্তানি আয় গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫% বৃদ্ধি পেয়ে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে।
আমরা বর্তমানে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং ল্যাটিন আমেরিকার ১৫০টিরও বেশি দেশে ঔষধ রপ্তানি করছি।
আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে জেনেরিক মেডিসিন, ভ্যাকসিন এবং বিভিন্ন ধরনের থেরাপিউটিক ড্রাগস।
গবেষণা ও উন্নয়নে (R&D) বিনিয়োগ:
আমরা আমাদের মোট আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গবেষণা ও উন্নয়নে পুনঃবিনিয়োগ করেছি।
ঢাকার কাছে অবস্থিত 'এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট) ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক' প্রকল্পটি প্রায় শেষের পথে। এটি চালু হলে, ঔষধের কাঁচামাল তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের আমদানি নির্ভরতা প্রায় ৭০% কমে আসবে, যা আমাদের শিল্পকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
আমাদের বিজ্ঞানীরা বায়োটেকনোলজি এবং বায়োসিমিলার ড্রাগস তৈরির মতো অত্যাধুনিক ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করছেন।
আমাদের শক্তি: যে ভিত্তির উপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি (Our Strengths)
১. বিশ্বমানের উৎপাদন সুবিধা:
আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ব্যবস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (USFDA), এবং ইউকে মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (MHRA)-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর 'গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস' (GMP) নীতিমালা দ্বারা স্বীকৃত। এটি আমাদের পণ্যের গুণগত মানের একটি আন্তর্জাতিক গ্যারান্টি।
২. দক্ষ এবং সাশ্রয়ী জনশক্তি:
আমাদের রয়েছে ফার্মাসিস্ট, রসায়নবিদ এবং বায়োকেমিস্টদের এক বিশাল এবং দক্ষ পুল, যারা আমাদের শিল্পের মূল চালিকাশক্তি। উন্নত বিশ্বের তুলনায় আমাদের উৎপাদন খরচ কম হওয়ায়, আমরা বিশ্ববাজারে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে ঔষধ সরবরাহ করতে পারি।
৩. সরকারের সহায়ক নীতি:
সরকার কর্তৃক 'এপিআই পার্ক' নির্মাণ, রপ্তানিতে প্রণোদনা প্রদান, এবং 'পেটেন্ট আইন ২০২২'-এর মতো পদক্ষেপগুলো আমাদের শিল্পের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতা: মানুষের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার
আমাদের ব্যবসা কেবল মুনাফা অর্জনের জন্য নয়, মানুষের সেবা করার জন্যও।
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ভূমিকা: মহামারীর সময়, আমাদের শিল্প দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ঔষধ, বিশেষ করে রেমডেসিভির এবং অন্যান্য অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগস-এর নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করেছে এবং বিশ্বের অনেক দেশেও তা রপ্তানি করেছে।
সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা: আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি কীভাবে উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য ঔষধের দাম নাগালের মধ্যে রাখা যায়।
পরিবেশগত সচেতনতা: আমাদের নতুন কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মিত হচ্ছে, যেখানে পানি পুনর্ব্যহার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা এবং কৌশলগত রোডম্যাপ (Future Outlook & Strategic Roadmap)
বিশ্ব ফার্মাসিউটিক্যালস বাজার এক বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই পরিবর্তনকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছি।
লক্ষ্য ১: জেনেরিক ড্রাগসের বৈশ্বিক হাবে পরিণত হওয়া:
আগামী কয়েক বছরে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অনেকগুলো ব্র্যান্ডেড ড্রাগসের পেটেন্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। আমরা সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সেইসব ড্রাগসের জেনেরিক সংস্করণ তৈরি করে বিশ্ববাজারে সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
লক্ষ্য ২: বায়োটেকনোলজিতে প্রবেশ:
ভবিষ্যৎ হলো বায়োটেকনোলজি এবং বায়োসিমিলার ড্রাগসের। আমরা এই খাতে গবেষণা এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
লক্ষ্য ৩: নতুন বাজার অনুসন্ধান:
আমরা বর্তমানে উন্নত বিশ্বের (আমেরিকা, ইউরোপ) নিয়ন্ত্রিত বাজারে প্রবেশের জন্য আমাদের পণ্যের মান এবং ডকুমেন্টেশনকে আরও উন্নত করার কাজ করছি। এই বাজারগুলোতে প্রবেশ করতে পারলে আমাদের রপ্তানি আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
উপসংহার: "বাংলাদেশ ফার্মা পিএলসি" আজ এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে। আমাদের ভিত্তি শক্ত, আমাদের লক্ষ্য स्पष्ट, এবং আমাদের সংকল্প অটুট। আমরা আমাদের সকল অংশীদারদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা কেবল একটি কোম্পানি নই, আমরা একটি স্বাস্থ্যকর এবং নীরোগ বিশ্ব গড়ার সহযাত্রী।
আপনাদের অবিচল আস্থা এবং সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।
বিনীত, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ফার্মা পিএলসি (প্রতীকী)