আমার ডেটা ব্যাকআপ করা কেন এত জরুরি? সাধারণ ফাইলই তো!
ভাবুন তো একবার, আপনার ফোনের গ্যালারিতে থাকা সন্তানের প্রথম হাঁটার ভিডিও, আপনার কম্পিউটারে বছরের পর বছর ধরে জমানো পারিবারিক ছবি, আপনার চাকরির জন্য তৈরি করা সিভি এবং গুরুত্বপূর্ণ সার্টিফিকেটগুলোর স্ক্যান কপি—যদি একদিন হঠাৎ করে আপনার ফোন বা হার্ড ড্রাইভ নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে কী হবে? এই ডিজিটাল ফাইলগুলো কেবল ডেটা নয়, এগুলো আমাদের স্মৃতি, অর্জন এবং পরিচয়ের অংশ। একটি হার্ডওয়্যার ফেইলার, ভাইরাস আক্রমণ, বা সামান্য একটি ভুলের কারণে এই অমূল্য সম্পদগুলো চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। ডেটা ব্যাকআপ হলো এই ডিজিটাল বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে আপনার একমাত্র ইন্স্যুরেন্স পলিসি। এটি আপনার ডিজিটাল স্মৃতি এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলোকে সুরক্ষিত রাখার একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া, কোনো ঐচ্ছিক বিলাসিতা নয়।
ডেটা ব্যাকআপ রাখার সেরা উপায়গুলো কী কী?
ডেটা সুরক্ষিত রাখার জন্য এসব অনুসরণ করার পরামর্শ রইলোঃ
_আপনার ডেটার কমপক্ষে ৩টি কপি রাখুন।_এই কপিগুলো কমপক্ষে ২টি ভিন্ন ধরনের স্টোরেজ মাধ্যমে রাখুন।
_এর মধ্যে কমপক্ষে ১টি কপি আপনার মূল স্থানের বাইরে (Off-site) রাখুন।
এই নিয়মটি মাথায় রেখে ব্যাকআপের সেরা উপায়গুলো হলো:
১. এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভ (HDD/SSD): এটি সবচেয়ে সহজ এবং জনপ্রিয় উপায়। আপনি একটি পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভে আপনার কম্পিউটারের সকল ডেটার একটি কপি রাখতে পারেন। Windows-এর জন্য "File History" এবং Mac-এর জন্য "Time Machine" সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়মিত ব্যাকআপ সেট করতে পারেন। এটি আপনার ডেটার দ্বিতীয় কপি হিসেবে কাজ করবে।
২. ক্লাউড স্টোরেজ: এটি আপনার ডেটার তৃতীয় এবং অফ-সাইট কপি রাখার জন্য বর্তমানে সেরা উপায়। Google Drive, Microsoft OneDrive, Dropbox-এর মতো পরিষেবাগুলো আপনার ফাইলগুলোকে তাদের সুরক্ষিত সার্ভারে জমা রাখে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে আপনি আপনার ফাইল অ্যাক্সেস করতে পারবেন। আপনার বাড়ি বা অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ক্লাউডে আপনার ডেটা সুরক্ষিত থাকবে।
৩. নেটওয়ার্ক অ্যাটাচড স্টোরেজ (NAS): এটি মূলত আপনার বাড়ির বা অফিসের নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত একটি ব্যক্তিগত হার্ড ড্রাইভ। আপনি আপনার সকল ডিভাইস থেকে এখানে ডেটা ব্যাকআপ রাখতে পারেন এবং এটি আপনার ব্যক্তিগত ক্লাউড সার্ভারের মতো কাজ করে। এটি এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভের চেয়ে বেশি সুবিধাজনক কিন্তু ক্লাউড স্টোরেজের মতো অফ-সাইট নিরাপত্তা দেয় না, যদি না আপনি এটিকে অন্য কোনো অফ-সাইট NAS বা ক্লাউড পরিষেবার সাথে সিঙ্ক করেন।
ক্লাউড স্টোরেজ কি আসলেই নিরাপদ? আমার ব্যক্তিগত ফাইল অন্যের হাতে চলে যাবে না তো?
এটি একটি খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন। উত্তর হলো: হ্যাঁ, reputable বা নির্ভরযোগ্য ক্লাউড স্টোরেজ পরিষেবাগুলো অত্যন্ত নিরাপদ। তারা আপনার ডেটাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একাধিক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যবহার করে:
এনক্রিপশন: আপনি যখন ফাইল আপলোড করেন, তখন সেগুলোকে এনক্রিপ্ট (সাংকেতিক কোডে রূপান্তরিত) করে ফেলা হয়। ফলে কেউ ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারলেও সেটিকে পড়তে পারে না। Google Drive, OneDrive-এর মতো সার্ভিসগুলো আপনার ফাইলকে ট্রানজিট এবং সার্ভার উভয় অবস্থাতেই এনক্রিপ্ট করে রাখে।
টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA): আপনার পাসওয়ার্ড কেউ জেনে গেলেও, 2FA চালু থাকলে সে আপনার অ্যাকাউন্টে লগইন করতে পারবে না, কারণ এর জন্য আপনার মোবাইলে আসা একটি কোডের প্রয়োজন হবে।
ফিজিক্যাল সিকিউরিটি: এই কোম্পানিগুলোর ডেটা সেন্টারগুলো অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থানে অবস্থিত এবং সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে।
তবে, চূড়ান্ত নিরাপত্তা আপনার নিজের হাতে। একটি শক্তিশালী ও ইউনিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা এবং টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু রাখা আপনার দায়িত্ব।
কতদিন পরপর আমার ব্যাকআপ করা উচিত?
এটি নির্ভর করে আপনি কত ঘন ঘন আপনার ডেটা পরিবর্তন বা নতুন ডেটা তৈরি করেন তার উপর।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফাইল: প্রতিদিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যাকআপ সেট করা উচিত।
ব্যক্তিগত ফাইল (ছবি, ভিডিও): সপ্তাহে একবার বা মাসে একবার ব্যাকআপ করাই যথেষ্ট।
সাধারণ নিয়ম: নিজেকে প্রশ্ন করুন, "যদি আমার ডিভাইস আজ নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে গত কতদিনের ডেটা হারালে আমার চলবে?" যদি উত্তর হয় "এক সপ্তাহ", তাহলে আপনাকে প্রতি সপ্তাহে ব্যাকআপ করতে হবে।
সবচেয়ে ভালো হয় একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যাকআপ সিস্টেম সেট করে রাখা, যাতে আপনাকে এটি নিয়ে আর ভাবতে না হয়। মনে রাখবেন, যে ব্যাকআপটি আপনি করেননি, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।