একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয়ের জন্য যা যা প্রয়োজন—আগুনে বোলিং, অধিনায়কের দায়িত্বশীল ইনিংস এবং একজন কার্যকরী অলরাউন্ডারের বিস্ফোরক ফিনিশিং—তার সবই আজ দেখা গেল সিলেটের মাঠে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতে বাংলাদেশ দেখালো এক সত্যিকারের দাপুটে পারফরম্যান্স। পেসার তাসকিন আহমেদের গতির ঝড়ে ডাচদের ব্যাটিং লাইনআপকে গুঁড়িয়ে দিয়ে এবং পরে অধিনায়ক লিটন দাসের ক্ল্যাসিক হাফ-সেঞ্চুরিতে ভর করে বাংলাদেশ ৮ উইকেটের এক সহজ জয় তুলে নিয়েছে। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি টাইগাররা প্রতিপক্ষকে এক শক্তিশালী বার্তাও দিয়ে রাখলো।
তাসকিনের আগুনে বোলিংয়ে দিশেহারা ডাচরা
সিলেটের সবুজ গালিচায় টস জিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ডাচ দুই ওপেনার ম্যাক্স ও’ডাউড এবং বিক্রমজিত সিং প্রথম তিন ওভারে ২৫ রান তুলে একটি ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু চতুর্থ ওভারে বল হাতে নিয়েই ম্যাচের চিত্রনাট্য বদলে দেন 'স্পিডস্টার' তাসকিন আহমেদ।
নিজের স্পেলের প্রথম বলেই বিধ্বংসী হয়ে ওঠা ও’ডাউডকে (১৫ বলে ২৩) ফিরিয়ে দিয়ে ডাচ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন তিনি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে আবারও প্রথম বলে বিক্রমজিতকে (৪) সাজঘরের পথ দেখান। তার গতি এবং নিখুঁত লাইন-লেংথের সামনে ডাচ ব্যাটসম্যানরা ছিলেন অসহায়। পরে তিনি কাইল ক্লেইন (৯) এবং নোয়া ক্রোয়েসকে (১১) আউট করে নিজের ৪ উইকেটের কোটা পূরণ করেন। মাত্র ২৮ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়ে তাসকিনই ছিলেন এই ম্যাচের নায়ক, যা তাকে এনে দেয় ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সাইফ ও মুস্তাফিজের যুগলবন্দী
তাসকিন যখন এক প্রান্ত থেকে আগুন ঝরাচ্ছিলেন, অন্য প্রান্ত থেকে ডাচদের চেপে ধরার কাজটি দারুণভাবে করেছেন সাইফ হাসান এবং মুস্তাফিজুর রহমান। বিশেষ করে সাইফ হাসান ছিলেন দিনের অন্যতম বড় প্রাপ্তি। দশম ওভারে বল করতে এসে তিনি জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে নেদারল্যান্ডসের মিডল অর্ডারকে ভেঙে দেন। প্রথমে তিনি ফেরান ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসকে (১২) এবং পরে তেজা নিদামানুরুকে (২৬)। এই উইকেট দুটি ছিল সাইফের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম শিকার। তার এই পারফরম্যান্স বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপে নতুন গভীরতা যোগ করলো। মুস্তাফিজও তার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে একটি উইকেট নিয়ে ডাচদের রানের গতিকে আটকে রাখেন। যদিও শেষদিকে প্রিঙ্গেল ও আরিয়ানের ২৭ রানের জুটিতে নেদারল্যান্ডস ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৬ রানের একটি সম্মানজনক স্কোর পায়।
অধিনায়কের ব্যাটে সহজ হলো লক্ষ্য
১৩৭ রানের মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটাও ছিল ঝোড়ো। পারভেজ হোসেন ইমন প্রথম ওভারেই দুটি চার ও একটি ছক্কায় ১৪ রান তুলে ম্যাচের সুরটা সেট করে দেন। যদিও তিনি ৯ বলে ১৫ রান করে ফিরে যান, কিন্তু তার আগ্রাসী শুরুটা দলকে এনে দেয় দারুণ এক মোমেন্টাম।
এরপরই শুরু হয় 'লিটন শো'। আরেক ওপেনার তানজিদ হাসানকে (২৪ বলে ২৯) সাথে নিয়ে তিনি ৩৯ বলে ৬৬ রানের এক চমৎকার জুটি গড়েন, যা বাংলাদেশের জয়কে সময়ের ব্যাপারে পরিণত করে। লিটন ছিলেন শুরু থেকেই সাবলীল। তার কব্জির মোচড়ে খেলা দর্শনীয় শটগুলো দর্শকদের মন ভরিয়ে দেয়। মাত্র ২৬ বলে তিনি তুলে নেন তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ-সেঞ্চুরি, আর এর মাধ্যমে তিনি স্পর্শ করেন সাকিব আল হাসানের রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত ২৯ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৪ রানে অপরাজিত থেকে এবং দলের জয় নিশ্চিত করেই তিনি মাঠ ছাড়েন।
সাইফ হাসানের অলরাউন্ড চমক
বল হাতে ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট পাওয়ার পর ব্যাট হাতেও নিজের কার্যকারিতা প্রমাণ করেন সাইফ হাসান। তানজিদ আউট হওয়ার পর ক্রিজে এসে তিনি লিটনের সাথে জুটি বাঁধেন। তার ১৯ বলে খেলা ৩৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংসটি ছিল অসাধারণ। ১টি চার এবং ৩টি বিশাল ছক্কায় তিনি ডাচ বোলারদের শাসন করে ৩৯ বল বাকি থাকতেই দলের জয়কে ত্বরান্বিত করেন। বল ও ব্যাট হাতে তার এই অলরাউন্ড নৈপুণ্য ছিল দলের জন্য একটি বড় পাওয়া।
শেষ কথা
এই জয়টি ছিল একটি পরিপূর্ণ দলীয় পারফরম্যান্সের প্রতিচ্ছবি। তাসকিনের বিধ্বংসী বোলিং, লিটনের দায়িত্বশীল ব্যাটিং এবং সাইফ হাসানের অলরাউন্ড দক্ষতা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে যে তারা এই সিরিজে প্রতিপক্ষের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামবে টাইগাররা।