
ভূমিকা:
প্রবাস জীবনে আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বা নথি, যেমন - পাসপোর্ট, ভিসা, সিভিল আইডি, বিভিন্ন সার্টিফিকেট এবং প্রিয় মুহূর্তের ছবিগুলো সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু ফোন বা ল্যাপটপ হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে এই সব মূল্যবান ফাইল হারানোর একটা বড় ঝুঁকি থেকে যায়। এই সমস্যার সবচেয়ে আধুনিক এবং নিরাপদ সমাধান হলো ক্লাউড স্টোরেজ, এবং এক্ষেত্রে
গুগল ড্রাইভ কী? গুগল ড্রাইভ হলো গুগলের একটি ক্লাউড-ভিত্তিক ফাইল স্টোরেজ এবং সিঙ্ক্রোনাইজেশন পরিষেবা। প্রতিটি গুগল অ্যাকাউন্টের সাথে বিনামূল্যে ১৫ জিবি (GB) স্টোরেজ পাওয়া যায়, যা গুগল ড্রাইভ, জিমেইল এবং গুগল ফটোজের মধ্যে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনে আরও বেশি স্টোরেজ কেনারও সুযোগ রয়েছে।
ধাপ ১: ফাইল আপলোড এবং ফোল্ডার তৈরি করা আপনার ফাইলগুলো গুছিয়ে রাখার প্রথম ধাপ হলো সেগুলোকে ড্রাইভে আপলোড করা এবং সুন্দরভাবে ফোল্ডারে সাজানো।
ফাইল আপলোড:
আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে drive.google.com-এ যান অথবা গুগল ড্রাইভ অ্যাপটি খুলুন।
বাম দিকে থাকা
+ New
বাটনে ক্লিক করুন।File upload
(একটি ফাইলের জন্য) বাFolder upload
(পুরো ফোল্ডারের জন্য) অপশনটি বেছে নিন।আপনার কম্পিউটার থেকে কাঙ্ক্ষিত ফাইল বা ফোল্ডারটি সিলেক্ট করুন এবং
Open
-এ ক্লিক করুন। ফাইলটি আপলোড হতে শুরু করবে।
নতুন ফোল্ডার তৈরি:
+ New
বাটনে ক্লিক করেNew folder
অপশনটি বেছে নিন।ফোল্ডারের একটি নাম দিন (যেমন: "My Documents", "Certificates", "Family Photos") এবং
Create
-এ ক্লিক করুন।এরপর আপনি ফাইলগুলোকে ড্র্যাগ করে নির্দিষ্ট ফোল্ডারে রাখতে পারবেন।
ধাপ ২: ফাইল শেয়ার এবং পারমিশন সেট করা গুগল ড্রাইভের সবচেয়ে শক্তিশালী ফিচারগুলোর মধ্যে একটি হলো ফাইল শেয়ারিং। আপনি সহজেই আপনার ফাইল বা ফোল্ডার অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং কে কী করতে পারবে, সেটাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
যে ফাইল বা ফোল্ডারটি শেয়ার করতে চান, সেটির উপর রাইট-ক্লিক করুন এবং
Share
অপশনটি বেছে নিন।Add people and groups
বক্সে আপনি যার সাথে শেয়ার করতে চান, তার ইমেইল অ্যাড্রেসটি লিখুন।ডানদিকের ড্রপ-ডাউন মেন্যু থেকে পারমিশন সেট করুন:
Viewer: শুধুমাত্র ফাইলটি দেখতে পারবে, কোনো পরিবর্তন করতে পারবে না।
Commenter: ফাইলটি দেখার পাশাপাশি কমেন্ট করতে পারবে।
Editor: ফাইলটি দেখা, কমেন্ট করা এবং এডিট করাসহ সব ধরনের পরিবর্তন করতে পারবে।
একটি ঐচ্ছিক মেসেজ লিখে
Send
-এ ক্লিক করুন।
ধাপ ৩: যেকোনো ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেস গুগল ড্রাইভে রাখা ফাইল আপনি ইন্টারনেট সংযোগ থাকা যেকোনো ডিভাইস—কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট থেকে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। শুধু আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে লগইন করলেই হবে। এর জন্য কম্পিউটারে "Google Drive for Desktop" অ্যাপ এবং মোবাইলে "Google Drive" অ্যাপটি ইনস্টল করে নিতে পারেন। এতে আপনার ডিভাইসের ফাইলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ড্রাইভের সাথে সিঙ্ক (Sync) হয়ে যাবে।
ধাপ ৪: অফলাইন অ্যাক্সেস চালু করা অনেক সময় ইন্টারনেট সংযোগ থাকে না, কিন্তু আপনার জরুরি ফাইলটি দেখা প্রয়োজন হতে পারে। গুগল ড্রাইভ আপনাকে নির্দিষ্ট ফাইল অফলাইনে দেখার সুযোগ দেয়।
কম্পিউটারে (ক্রোম ব্রাউজারে): সেটিংসে গিয়ে "Offline" অপশনটি চালু করুন।
মোবাইল অ্যাপে: যে ফাইলটি অফলাইনে সেভ করতে চান, তার পাশে থাকা তিনটি ডট (...) মেন্যুতে ক্লিক করে
Make available offline
অপশনটি চালু করে দিন।
ধাপ ৫: গুগল ডকস, শিটস এবং স্লাইডস ব্যবহার গুগল ড্রাইভ কেবল ফাইল স্টোরেজের জন্যই নয়, এটি মাইক্রোসফট অফিসের একটি শক্তিশালী বিকল্প। আপনি ড্রাইভের ভেতরেই নতুন ডকুমেন্ট, স্প্রেডশিট বা প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে পারেন।
+ New
বাটনে ক্লিক করেGoogle Docs
,Google Sheets
বাGoogle Slides
বেছে নিন।এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, একাধিক ব্যক্তি একই সাথে একটি ডকুমেন্টে কাজ করতে পারে (Real-time Collaboration), যা দলবদ্ধ কাজের জন্য অসাধারণ।
উপসংহার: গুগল ড্রাইভ একজন প্রবাসীর জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি টুল। এটি আপনার জরুরি কাগজপত্র সুরক্ষিত রাখে, যেকোনো স্থান থেকে ফাইল অ্যাক্সেসের সুবিধা দেয় এবং অন্যদের সাথে ফাইল শেয়ার করার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। আজই আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো গুগল ড্রাইভে আপলোড করে ডিজিটালভাবে গোছানো এবং সুরক্ষিত থাকুন।