গ্রামের শুরুটা
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এক গ্রাম— নাম তার বোয়ালগাঁও। এখানে সবাই সাদাসিধে জীবনযাপন করে। সকালে কৃষিকাজ, বিকেলে আড্ডা, আর রাতে টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনে ঘুম।
কিন্তু গ্রামের এক নম্বর আজব মানুষ হলো— হাবিব।
হাবিব সারাজীবন ধরে একটাই স্বপ্ন দেখে এসেছে— সে একদিন গ্রামের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী হবে।
সমস্যা হলো, সে যত ব্যবসা শুরু করে, সব শেষমেশ ভেস্তে যায়। হাঁসের ব্যবসা করে হাঁস পালিয়ে গেছে, কলার ব্যবসায় সব কলা পচে গেছে, আর ভেড়ার ব্যবসায় ভেড়াগুলো অন্য গ্রামে পালিয়ে গিয়ে গায়ের লোকজনের ক্ষেতে ঘাস খেয়ে ফেলেছে।
তবুও হাবিব হাল ছাড়ে না।
নতুন আইডিয়া
একদিন হাটে গিয়ে হাবিব দেখল এক গাভী বিক্রি হচ্ছে। গাভীর মালিক বলল—
— “ভাই, এই গাভী দুধ দেয়, খায়ও কম। একে কিনলে তো হইলেই হলো, একদম লাভের ধান্দা।”
হাবিব মনে মনে ভাবল—
— “যদি এই গাভীর দুধ থেকে আমি আলাদা কিছু বানাতে পারি, তবে তো রাতারাতি কোটিপতি।”
সে গাভীটা কিনে আনল।
গ্রামের গুজব
গাভী বাড়িতে আসার পর হাবিব গুজব ছড়াল—
— “শোনেন সবাই, এই গাভী সাধারণ গাভী না। এর দুধ খেলে শরীরের হাড়ে সোনা জমে।”
লোকজন অবাক হয়ে গেল। পাশের বাড়ির লতিফা খালা তো বলেই বসল—
— “হায় আল্লাহ, আমি যদি দুই গ্লাস খাই, আমার দাঁত কি সোনার হবে?”
এমন গুজবে গ্রামের লোকেরা ভিড় জমাল হাবিবের বাড়িতে। সবাই লাইন দিয়ে দাঁড়াল দুধ কেনার জন্য।
প্রথম পরীক্ষা
প্রথমে গ্রামের ইসমাইল মিয়া এক গ্লাস দুধ খেলো। খাওয়ার পর সে বলল—
— “আহা! শরীরে গরমি লাগতাছে। মনে হইতাছে হাড়ের ভেতর কিছু কুটকুট করতাছে।”
অন্যরা শুনে বলল—
— “হায় আল্লাহ, শুরু হইছে! সোনা হইতাছে।”
পরদিন ইসমাইল মিয়ার বউ দেখল— তার দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে হলুদ কিছু জমেছে। সঙ্গে সঙ্গে গুজব ছড়াল—
— “সোনা বের হইতাছে!”
মোড় ঘোরা
হাবিব ব্যবসা জমিয়ে তুলল। দুধের দাম বাড়তে বাড়তে এমন হলো যে গ্রামের লোকজন চাল-ডাল বাদ দিয়ে শুধু গাভীর দুধ খাওয়া শুরু করল।
কিন্তু সমস্যা হলো, কিছুদিন পর সবার পেটে গ্যাস জমতে লাগল। লোকে বলল—
— “এই সোনার গ্যাস হইতাছে।”
একদিন তো এমন হলো— গ্রামের মাসুদ রাতে দুধ খেয়ে ঘুমাল, ভোরে উঠে এমন পাদ দিল যে টিনের চাল কেঁপে উঠল। সবাই বলল—
— “এটা নিশ্চিত সোনার শব্দ।”
কাণ্ডকারখানা
হাবিব এতটাই বিখ্যাত হয়ে গেল যে পাশের গ্রামের মানুষও আসতে লাগল। কেউ বলল—
— “আমার বউরে যদি খাওয়াই, ওর গলায় সোনার হার হবে।”
আবার কেউ বলল—
— “আমার গরু যদি খায়, তাহলে কি দুধ থেকে ডিম পাব?”
অবশেষে একদিন এক সাহসী লোক এসে পরীক্ষা করতে গেল। সে এক লিটার দুধ একসাথে খেল। হঠাৎ তার পেট থেকে এমন শব্দ হলো যে সবাই ভয় পেয়ে পালাল।
লোকটা মাটিতে বসে হেসে বলল—
— “সোনা তো নাই, তবে ড্রাম বাজাইতে পারি।”
পরিণতি
শেষমেশ হাবিবের কাণ্ড ফাঁস হয়ে গেল। আসলে গাভীটা একেবারে সাধারণ গাভী। হাবিব চাতুরী করে দুধে হলুদের গুঁড়া মিশাত। তাই খাওয়ার পর দাঁত-হাড় হলুদ হয়ে যেত।
গ্রামের মাতব্বর ঘোষণা দিলো—
— “আজ থেকে হাবিবের নাম হবে ‘সোনার হাবিব’। তবে ব্যবসা করার আগে ডাক্তার দেখাইতে হবে।”
সমাপ্তি
হাবিব আবারও ব্যবসায় ব্যর্থ হলেও গ্রামের ইতিহাসে তার নাম রয়ে গেল—
“যে লোক গাভীর দুধে সোনার ডিম বিক্রি করতে চেয়েছিল।”
