গুগল ম্যাপস টিপস: যেভাবে একজন সাধারণ ব্যবহারকারী থেকে 'ম্যাপ মাস্টারে' পরিণত হবেন

0

আপনার পকেটে থাকা স্মার্টফোনটি কেবল একটি যোগাযোগের যন্ত্র নয়, এটি একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রীদের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী টুল। আর এই টুলের হৃদপিণ্ডে রয়েছে গুগল ম্যাপস (Google Maps)। আমরা বেশিরভাগই গুগল ম্যাপসকে কেবল এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার দিকনির্দেশনা দেখার জন্য ব্যবহার করি। কিন্তু এটি হলো ম্যাপের উপরিভাগের ব্যবহার। এর গভীরে লুকিয়ে আছে এমন সব শক্তিশালী ফিচার এবং গোপন কৌশল, যা আপনাকে একজন সাধারণ পর্যটক থেকে একজন দক্ষ 'আরবান এক্সপ্লোরার' বা শহুরে অভিযাত্রীতে পরিণত করতে পারে। এই ফিল্ড গাইডটিতে, আমরা গুগল ম্যাপসের সেইসব লুকানো রত্নগুলো উন্মোচন করব।


অধ্যায় ১: অভিযানের পূর্বপ্রস্তুতি—অফলাইন ম্যাপস

পরিস্থিতি: আপনি এমন এক জায়গায় যাচ্ছেন, যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল বা একেবারেই নেই (যেমন: পাহাড়ি এলাকা বা বিদেশের কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চল)। সমস্যা: ইন্টারনেট ছাড়া গুগল ম্যাপস অচল। সমাধান: অফলাইন ম্যাপস—আপনার ব্যক্তিগত মানচিত্র গুগল ম্যাপস আপনাকে যেকোনো এলাকার ম্যাপ আপনার ফোনে ডাউনলোড করে রাখার সুযোগ দেয়, যা আপনি ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই ব্যবহার করতে পারবেন।

  • কৌশল:

    1. গুগল ম্যাপস অ্যাপটি খুলুন।

    2. উপরে ডানদিকে আপনার প্রোফাইল ছবিতে ট্যাপ করুন এবং "Offline maps" নির্বাচন করুন।

    3. "Select Your Own Map"-এ ট্যাপ করুন।

    4. এবার, আপনি যে এলাকাটি ডাউনলোড করতে চান, সেটিকে স্ক্রিনের আয়তক্ষেত্রের মধ্যে এনে "Download" বাটনে চাপ দিন।

  • ফিল্ড নোট: এই ডাউনলোড করা ম্যাপে আপনি দিকনির্দেশনা দেখতে পারবেন, কিন্তু লাইভ ট্র্যাফিক আপডেট বা বিকল্প রুট পাবেন না। তাই, ভ্রমণের আগেই আপনার সম্ভাব্য গন্তব্যগুলো ডাউনলোড করে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ।

অধ্যায় ২: গুপ্তধনের মানচিত্র—আপনার ব্যক্তিগত আগ্রহের জগৎ

পরিস্থিতি: আপনি একটি নতুন শহরে বেড়াতে গেছেন এবং আপনার পছন্দের জায়গাগুলো (যেমন: সেরা কফি শপ, ঐতিহাসিক স্থান, বন্ধুর বাসা) মনে রাখতে চান। সমাধান: সেভ এবং লেবেল—আপনার নিজস্ব ট্রেজার ম্যাপ

  • কৌশল:

    • সেভ করা: ম্যাপের যেকোনো জায়গার উপর ট্যাপ করে ধরে রাখুন। নিচের দিকে সেই জায়গার নাম এলে, "Save" বাটনে ট্যাপ করুন। আপনি এটিকে আপনার পছন্দের তালিকায় (Favorites), যেতে চান এমন তালিকায় (Want to go), বা তারকাচিহ্নিত স্থানে (Starred places) সেভ করতে পারেন।

    • নতুন তালিকা তৈরি: আপনি আপনার নিজস্ব তালিকাও তৈরি করতে পারেন। যেমন: "ঢাকা'র সেরা বিরিয়ানির দোকান" বা "কুয়েতের দর্শনীয় স্থান"।

    • লেবেল করা: কোনো একটি সেভ করা জায়গাকে আপনি একটি ব্যক্তিগত নাম বা 'লেবেল' দিতে পারেন। যেমন: আপনার বন্ধুর বাসার ঠিকানাকে আপনি "রহিমের বাসা" নামে লেবেল করে রাখতে পারেন। এরপর, সার্চ বক্সে শুধু "রহিমের বাসা" লিখলেই ম্যাপ আপনাকে দিকনির্দেশনা দেখিয়ে দেবে।

অধ্যায় ৩: গোপন পথ এবং সময় বাঁচানোর কৌশল

  • একাধিক গন্তব্য যোগ করা (Multi-stop Routes):

    • পরিস্থিতি: আপনাকে বাসা থেকে বেরিয়ে প্রথমে অফিসে যেতে হবে, তারপর ব্যাংক, এবং সবশেষে বাজার করে বাসায় ফিরতে হবে।

    • কৌশল: গুগল ম্যাপসে আপনার চূড়ান্ত গন্তব্য সেট করার পর, তিনটি ডট (...) মেন্যুতে ট্যাপ করে "Add stop" নির্বাচন করুন। আপনি আপনার যাত্রাপথে একাধিক গন্তব্য যোগ করতে পারেন এবং সেগুলোকে আপনার সুবিধামতো সাজিয়ে নিতে পারেন।

  • পার্কিং-এর অবস্থান সেভ করা:

    • একটি বিশাল শপিং মলের পার্কিং লটে আপনার গাড়িটি কোথায় রেখেছেন, তা ভুলে যাওয়াটা খুব সাধারণ একটি সমস্যা।

    • কৌশল: গাড়ি পার্ক করার পর, গুগল ম্যাপসে আপনার বর্তমান অবস্থান দেখানো নীল ডটটির উপর ট্যাপ করুন এবং "Set as parking location" নির্বাচন করুন। ম্যাপ আপনার পার্কিং-এর অবস্থানটি মনে রাখবে।

অধ্যায় ৪: টাইম মেশিন—আপনার ডিজিটাল পদচিহ্ন

গুগল ম্যাপসের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং কিছুটা উদ্বেগজনক ফিচার হলো 'টাইমলাইন'।

  • কীভাবে কাজ করে: যদি আপনার ফোনের লোকেশন সার্ভিস চালু থাকে, তাহলে গুগল ম্যাপস নীরবে আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ রেকর্ড করে রাখে। আপনি কোন দিন, কোন সময়ে, কোন রাস্তা দিয়ে, কোন দোকানে গিয়েছিলেন—এই সবকিছুই আপনার টাইমলাইনে সংরক্ষিত থাকে।

  • ব্যবহার: আপনি Maps > Profile Picture > Your timeline-এ গিয়ে আপনার অতীত ভ্রমণ দেখতে পারেন। এটি হারিয়ে যাওয়া কোনো জায়গা খুঁজে বের করতে বা কোনো স্মৃতি রোমন্থন করতে সহায়ক হতে পারে।

  • গোপনীয়তা: যদি এই ফিচারটি আপনার কাছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন বলে মনে হয়, তাহলে আপনি সহজেই গুগল অ্যাকাউন্ট সেটিংস থেকে 'লোকেশন হিস্ট্রি' পজ করে দিতে বা পুরনো ডেটা মুছে ফেলতে পারেন।

অধ্যায় ৫: অভিযাত্রীর অবদান—মানচিত্রকে আরও সমৃদ্ধ করা গুগল ম্যাপস কেবল একটি টুলই নয়, এটি একটি কমিউনিটি-চালিত প্ল্যাটফর্ম।

  • রিভিউ এবং ছবি যোগ করা: আপনি কোনো রেস্তোরাঁ বা দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আপনার মতামত এবং ছবি যোগ করে অন্য অভিযাত্রীদের সাহায্য করতে পারেন।

  • তথ্য সংশোধন: যদি আপনি দেখেন ম্যাপের কোনো তথ্য (যেমন: একটি দোকানের খোলার সময়) ভুল আছে, তাহলে আপনি "Suggest an edit" অপশন ব্যবহার করে সেটি সংশোধন করার জন্য রিপোর্ট করতে পারেন।

এই ছোট ছোট কৌশলগুলো আপনাকে গুগল ম্যাপসের একজন 'পাওয়ার ইউজার' করে তুলবে এবং আপনার প্রতিটি যাত্রাকে আরও সহজ, আরও গোছানো এবং আরও আনন্দময় করে তুলবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!