রহিম ঢাকার ছেলে। সারাজীবন সে শুধু রিকশায় চড়েছে আর মাঝে মাঝে বন্ধুর মোটরসাইকেলের পেছনে বসেছে। হঠাৎ একদিন ভাগ্য ঘুরলো— সে চলে গেলো আমেরিকা। গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়লো,
—“রহিম এখন আমেরিকায় গাড়ি চালায়!”
কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমেরিকায় ঢুকেই রহিমের সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়ালো ড্রাইভিং লাইসেন্স।
লাইসেন্সের প্রস্তুতি
বন্ধু জসিম বলল,
—“ভাই, আমেরিকায় টিকে থাকতে হলে গাড়ি চালানো শিখতে হবে।”
রহিম ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল,
—“এই দেশে কি গাড়ি চালানো এত কঠিন?”
জসিম হেসে বলল,
—“গাড়ি চালানো না, পরীক্ষায় পাশ করাই কঠিন।”
রহিম সিদ্ধান্ত নিলো লাইসেন্স দেবে। ইউটিউবে ভিডিও দেখলো, বই পড়লো, আবার স্বপ্নে গিয়েও দেখলো সে গাড়ি চালাচ্ছে— কিন্তু স্বপ্নে গিয়ে প্রতিবারই তার গাড়ি রাস্তা ছেড়ে খালে পড়ে।
লিখিত পরীক্ষা
পরীক্ষার হলে ঢুকলো। কম্পিউটারে প্রশ্ন উঠলো—
—“When do you stop at a red light?”
রহিম মাথা চুলকে বলল,
—“বাংলাদেশে তো লাল বাতি মানে হর্ন বাজিয়ে চলে যাওয়া।”
সে গেস করে দিলো— “Sometimes.”
কম্পিউটার দেখালো— Wrong!
সে আবার উত্তর দিলো— “If police watching.”
কম্পিউটার আবার বলল— Wrong!
শেষে রহিম মাথা ঘুরে পরীক্ষার অর্ধেক প্রশ্নে এমন উত্তর দিলো যা সে নিজেও বুঝলো না।
রোড টেস্টের অভিজ্ঞতা
যেদিন রোড টেস্ট, রহিমের শরীর কাঁপছিলো। পরীক্ষক গম্ভীর মুখে বলল,
—“Start the car.”
রহিম বলল,
—“Sir, কি বোতাম চাপলে শুরু হবে?”
পরীক্ষক ভ্রু কুঁচকালো।
গাড়ি চালাতে গিয়ে রহিম প্রথমেই ব্রেকের বদলে এক্সিলারেটরে চাপ দিলো। গাড়ি ঝটকা দিয়ে সামনে গেলো। পরীক্ষক চিৎকার করে উঠলো,
—“Brake! Brake!”
রহিম চেঁচিয়ে বলল,
—“Sir, ব্রেক কোনটা?”
অবস্থা একেবারে হাস্যকর। রোড টেস্ট শেষে পরীক্ষক কাগজে লিখে দিলো— “Better walk.”
ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা
রহিম ফোন দিলো গ্রামে।
—“মা, আমি এখনো লাইসেন্স পাইনি।”
—“কেন বাবা?”
—“মা, এখানে গাড়ি চালানো মানে অংকের পরীক্ষা, আমি তো অংকেই ফেল করতাম।”
একদিনের মজার ঘটনা
লাইসেন্সের চিন্তায় একদিন রাতে ঘুমাতে পারেনি। ভোরে বের হলো বাজার করতে। হঠাৎ রাস্তার পাশে এক ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নামলো। রহিম সাহস করে বলল,
—“ভাই, গাড়িটা একবার চালাতে দেন।”
লোক তাকিয়ে বলল,
—“Do you have a license?”
রহিম গম্ভীর হয়ে বলল,
—“লাইসেন্স নাই, কিন্তু সাহস আছে।”
সবাই হেসে গড়াগড়ি।
রহিমের উপলব্ধি
দিন শেষে রহিম বুঝলো, আমেরিকায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া মানে শুধু গাড়ি চালানো না— এটা আসলে জীবনের এক অদ্ভুত যুদ্ধ। কিন্তু যত ব্যর্থ হোক, একদিন সে লাইসেন্স পাবে। আর তখন গ্রামে ফোন দিয়ে বলবে—
—“মা, আমি এখন সত্যিকারের আমেরিকান— আমি রাস্তায় ট্রাফিক মেনে গাড়ি চালাচ্ছি!”