কানাডার শীত আর মজনুর জ্যাকেট

0

মজনু ঢাকার একেবারে খাঁটি ছেলে। সারাজীবন কেরানীগঞ্জের ধুলাবালির ভেতরে হাঁটাহাঁটি করেছে, রিকশার হর্ন শুনেছে, আর গরমে পাঞ্জাবি গায়ে ভিজিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ভাগ্যের এমন কাণ্ড হলো যে সে কানাডা চলে গেলো। গ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়লো—
—“মজনু নাকি এখন কানাডায়! বুঝি বরফের ভেতরে হাঁটছে আর স্টারবাক্সের কফি খাচ্ছে।”

মজনু আসলে কফি নয়, খাচ্ছিলো ঠান্ডার ধাক্কা। এয়ারপোর্টে নামার পরই ঠান্ডা হাওয়ায় তার নাক জমে গেলো। সে তখন নিজের শরীরটা মোড়াতে গা ঘেঁষে বসলো, যেন একটা পেঁচানো কম্বল ভেতরে লুকানো চ্যাপ্টা বিড়াল।

শীতের প্রথম ধাক্কা

পরদিন সকালে কাজে বের হতে হলো। গ্রামের লোকেরা ভেবেছিল, কানাডায় গেলে স্যুট-টাই পরে অফিসে যাবে। কিন্তু মজনুর হাতে তুলে দেওয়া হলো এক বিশাল সাইজের জ্যাকেট। এমন জ্যাকেট সে জীবনে দেখেনি— মনে হলো এটা পরে মানুষ নয়, আলমারি বের হচ্ছে।

জ্যাকেট পরে যখন আয়নার সামনে দাঁড়ালো, তার নিজের চেহারা দেখা যাচ্ছিল না। মা যদি ফোনে ছবি দেখতে পারতো, নিশ্চিত বলতো—
—“বাবা, তুই জ্যাকেটের ভেতরে আছিস নাকি জ্যাকেট তোকে খেয়ে ফেলছে?”

রাস্তার কানাডিয়ানরা তাকিয়ে হাসছিল। এক লোক তো সরাসরি বলে দিলো,
—“Hey man, are you walking or rolling?”
মজনু দাঁত কাঁপতে কাঁপতে বলল,
—“ভাই, আমি আসলে rolling pin হয়ে যাচ্ছি।”

বাসে ওঠার অভিজ্ঞতা

মজনু বাসে উঠলো। বাসের ভেতরে গরম হিটার চলছে। বাইরে -১৫ ডিগ্রি, ভেতরে ২৫ ডিগ্রি। শরীর তখন দুই দেশের যুদ্ধক্ষেত্র। জ্যাকেট খোলার পর তার শরীর থেকে ধোঁয়া উঠতে লাগল। পাশে বসা এক মহিলা ভেবেছিল, লোকটা আগুন ধরে গেছে। সে উঠে চিৎকার করে বলল,
—“Oh my God, is he burning?”
মজনু তখন বলল,
—“না না, আমি বারবিকিউ না। আমি শুধু বাংলাদেশি!”

কাজে প্রথম দিন

অফিসে গিয়ে বসলো। কম্পিউটার চালু করতেই কীবোর্ডের ওপর তার হাত জমে যাচ্ছিল। বস এসে বলল,
—“How are you doing?”
মজনু উত্তর দিলো বাংলিশে,
—“Sir, I am frozen but working.”
বস তাকিয়ে থাকলো, যেন সে নাসার কোনো গবেষককে দেখছে।

ঘরোয়া বিপদ

রাতে ঘরে এসে হিটার চালালো। হিটার এমন শব্দ করছে যেন পুরনো বাস চলার সময় ইঞ্জিন ফেটে যাচ্ছে। মজনু চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো। কিন্তু হঠাৎ ভোরে উঠে দেখল, জানালার কাঁচ বরফে জমে গেছে। সে হাত দিয়ে বরফ সরাতে চাইল, কিন্তু হাত আটকে গেলো। চেঁচিয়ে উঠল—
—“হায় আল্লাহ! জানালার কাঁচে আমার আঙুল ফ্রিজ হয়ে গেলো।”

রুমমেট দৌড়ে এসে বলল,
—“ভাই, চিন্তা করো না, একটু গরম পানি ঢালো।”
গরম পানি ঢালতেই কাঁচ গলে গেলো, কিন্তু নিচ থেকে আবার বরফ জমে গেলো।

ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা

মজনু ফোন দিলো মাকে।
—“মা, আমি ভালো আছি।”
—“বাবা, কেমন শীত পড়ে?”
—“মা, কানাডা আসলে একটা ফ্রিজ। আমি এখনো আইসক্রিমের মতো জমে আছি।”
মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
—“তুই গরমে থাকতে পারিস না, ঠান্ডায়ও না। তুই আসলে মাঝামাঝি দেশের জন্য।”

বাজার করার কাহিনী

মজনু বাজার করতে গেলো। দুধ, ডিম, ব্রেড কিনবে। কিন্তু বাইরে যেই না বের হয়েছে, ঠান্ডায় হাঁটাচলা বন্ধ। সে একটা সুপারশপে ঢুকে পড়লো। ভেতরে ঢুকে দেখলো দোকানদার হাসছে।
—“Brother, why are you shivering inside the shop?”
মজনু বলল,
—“Outside I was ice, inside I am soup.”

মজার ঘটনা

একদিন বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ হাওয়ায় তার টুপি উড়ে গেলো। সে টুপির পিছনে দৌড় দিলো। রাস্তায় সবাই তাকিয়ে হাসছে। এক শিশু চেঁচিয়ে বলল,
—“Look, snowman is running!”
মজনু হেসে বলল,
—“Yes, snowman is Bangladeshi now!”

উপসংহার (কাহিনীর রূপে)

এভাবে দিন যায়। মজনু বুঝতে পারলো, কানাডা শুধু স্বপ্নের দেশ না, ঠান্ডার দেশও। গরম দেশে যতই মানুষ কষ্ট পাক, ঠান্ডার দেশে তার চেয়ে আলাদা যুদ্ধ করতে হয়। তবে হাসাহাসি আর রসিকতা দিয়ে সে দিন কাটাচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!