ঢাকার ট্রাফিক জ্যামের রাজ্যে একদিন: রিকশা, বাস আর ধৈর্যের কাহিনী

0


সকালটা ছিলো একেবারে সাধারণ। অফিসে যাবো, ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ালাম। কিন্তু বুঝিনি, আজকে ঢাকার রাস্তাগুলো আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে বসেছে।

রিকশাওয়ালাকে বললাম, “ভাই, গুলিস্তান যাবেন?”
রিকশাওয়ালা এক গাল হেসে বলল, “যাবো, তবে আপনার ধৈর্য থাকতে হবে।”

রিকশা উঠেই মনে হলো আমি যেন কোনো রিয়েলিটি শোতে অংশ নিয়েছি— নাম “ঢাকার ট্রাফিক সারভাইভাল”! সামনে যতই যাই, ততই দেখি গাড়ির পর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। বাস, ট্রাক, রিকশা, প্রাইভেটকার— যেনো একসাথে সবাই রাস্তায় নেমে মিছিল করছে।

রিকশার পাশে বসা এক আন্টি ভ্যানগাড়িতে করে সবজি নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “বাবা, এই রাস্তায় যে আটকা পড়েছো, মনে রেখো— এটাই ঢাকার স্পেশালিটি।” আমি হাসলাম, কিন্তু ভেতরে মনে হচ্ছিল, অফিসে গিয়ে বস যদি বলেন, “তুমি দেরি করলে কেন?” আমি কি বলবো— “স্যার, আমি ট্রাফিক জ্যামের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে ছিলাম।”

এদিকে বাসের ড্রাইভার হর্ন বাজাতে বাজাতে এমনভাবে চেঁচাচ্ছে, মনে হলো সে যদি পুলিশ পেত, পুরো জ্যাম একাই খুলে ফেলত। পাশেই এক সিএনজি ড্রাইভার ধৈর্য হারিয়ে যাত্রীকে বলল, “আপনি নেমে যান, আমি আর পারছি না।” যাত্রী বলল, “তাহলে আমার ভাড়া ফেরত দেন।” দু’জনের ঝগড়া এমনভাবে শুরু হলো যে, আশেপাশের লোকেরা হাততালি দিয়ে মজা নিতে লাগলো।

এক পর্যায়ে রিকশা থেমে গেল। সামনের এক হকার হকারি করতে করতে রাস্তায় বসে গেল। সে আচার বিক্রি করছিল। আমি বিরক্ত হয়ে আচার কিনে ফেললাম। অদ্ভুত হলেও সত্যি— ট্রাফিক জ্যামে আটকে গিয়ে মানুষ আচার কিনে খাচ্ছে।

এদিকে পাশে এক রিকশায় কলেজের দু’জন ছেলে- মেয়ে বসে। তারা বিরক্ত হয়ে বারবার বলছে, “আমরা তো ক্লাস মিস করবো।” ছেলেটি বলল, “তাহলে এটাকে কপলস ডে বানিয়ে ফেলি।” মেয়েটি লজ্জা পেল, কিন্তু জ্যামের কারণে কোথাও যাওয়া যায়নি। ট্রাফিক জ্যাম তাদের জন্য ডেটের মতো হয়ে গেল।

আরেকজন অফিস যাত্রী মোবাইলে বসের সাথে কথা বলছিল। বলছিল, “স্যার, আমি অফিসের কাছেই আছি।” অথচ আমি দেখলাম লোকটা এখনো সায়েন্সল্যাবেই আটকা। তার কথা শুনে মনে হলো— ঢাকার মানুষদের মিথ্যার একাডেমি চালু হলে সবার ফার্স্ট ক্লাস পাস হবে।

প্রায় দুই ঘণ্টা পর যখন গন্তব্যে পৌঁছালাম, তখন শরীর ভেঙে গেছে। কিন্তু মনের ভেতর এক অদ্ভুত হাসি— এই শহরই আসলে আমাদের হাসি-কান্নার জায়গা। ঢাকার ট্রাফিককে নিয়ে যতই বিরক্ত হই না কেন, এর ভেতরেই লুকিয়ে থাকে অসংখ্য গল্প।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!