প্রবাস জীবনে রুমমেট ছাড়া চলেই না। কিন্তু এই রুমমেটদের জন্য যতটা হাসাহাসি হয়, তার অর্ধেকও দেশে থেকে করা যায় না। আমাদের ফ্ল্যাটে ছয়জন থাকতাম, আর প্রতিদিনই কোনো না কোনো কমেডি ঘটত।
একদিন ভাত রান্নার দায়িত্ব পড়লো আমাদের এক রুমমেট রাশেদের উপর। সে এতটা ভাত দিল যে পুরো হাঁড়ি উপচে পড়ে গেল। আমরা সবাই বললাম, “তুই কি ভাত রান্না করছিস, নাকি বন্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিস?”
পরের দিন আবার ভাত রান্না করতে গিয়ে সে পানি কম দিয়ে দিল। ভাত হলো একেবারে পাথরের মতো। চামচ ঢুকাতে গেলে চামচই বাঁকিয়ে গেল। আমরা বললাম, “এই ভাত দিয়ে ভবনের ফ্লোর বানানো যাবে।”
আরেকজন রুমমেটের কাজ ছিল চা বানানো। সে মনে করত, চা বানানো মানেই এক ধরণের আর্ট। একদিন সে চায়ে এলাচ দিতে গিয়ে ভুল করে মরিচ দিয়ে ফেলল। আমরা প্রথম চুমুক দিয়েই চিৎকার করলাম, “এটা কি চা, না মরিচের স্যুপ?” কিন্তু লোকটা সিরিয়াস হয়ে বলল, “এটা হলো নতুন ফিউশন চা।”
আমাদের আরেকজন ভাই সবসময় অনলাইনে চাকরির অ্যাপ্লিকেশন করত। কিন্তু রাতে এসে ঘুমের ঘোরে বলত, “Dear Sir, I am very interested in this job…” আমরা হেসে বলতাম, “দোস্ত, স্বপ্নেও তুই কভার লেটার লিখিস?”
একবার রুমের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেল। তখন সবাই মিলে মোমবাতি জ্বালিয়ে গল্প শুরু করলাম। হঠাৎ এক ভাই ভূতের গল্প বলা শুরু করল। আরেকজন ভয় পেয়ে দরজা খোলা রেখে ঘুমাল। সকালে আমরা তাকে মজা করে বললাম, “তুই ভূতকে ভেতরে ডাকতে দরজা খুলে রেখেছিলি?”
সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটল এক শুক্রবার সকালে। সবাই ঘুমাচ্ছি, হঠাৎ দেখি রান্নাঘরে ধোঁয়া। ছুটে গিয়ে দেখি, মুস্তাফিজ নামের এক ভাই ডিম ভাজতে গিয়ে ডিম ফাটিয়ে প্যানে না দিয়ে ফ্লোরে ফেলেছে। সে নাকি ভিডিও দেখে রান্না করছিল, কিন্তু ভিডিও পজ না করায় হাতে থাকা ডিম ফসকে পড়ে গেল। আমরা সবাই হেসে বললাম, “এই ডিম ফ্রাই নয়, এটাকে বলে ফ্লোর ফ্রাই।”
এই সব ঘটনা আমাদের জীবনে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে আজও মনে হলে হাসি থামানো যায় না। প্রবাসে রুমমেট মানেই ঝগড়া, ভালোবাসা আর হাসির এক রঙিন সমাহার।
