যখন জীবন জীবিকার চেয়ে সস্তা
রহিম (ছদ্মনাম), বয়স ২৩। বাংলাদেশের দক্ষিণের এক গ্রামের ছেলে। চোখে ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন—একটি চাকরি, পরিবারের মুখে হাসি ফোটানো, আর একটুখানি সচ্ছলতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও গত দুই বছর ধরে সে চষে বেড়িয়েছে চাকরির বাজারের প্রতিটি অলিগলি। তার টেবিলে থাকা চাকরির আবেদনপত্রের নিচে চাপা পড়ে গেছে তার সব স্বপ্ন। প্রতিবছর দেশে যে প্রায় ৪০ লক্ষ নতুন মুখ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, রহিম তাদেরই একজন—শিক্ষিত, উদ্যমী, কিন্তু বেকার।
বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেনি, এমন নয়। স্থানীয় দালালের সাথে কথা বলে জানতে পারে, একটি ‘ভালো’ দেশে যেতে হলে লাগবে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। অথচ পাশের দেশ ভারত থেকে একই কাজে যেতে খরচ মাত্র এক থেকে দেড় লক্ষ। এই বিপুল অর্থ জোগাড় করা তার পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। হতাশার এক অন্ধকার রাতে, টেলিগ্রামের একটি গ্রুপে সে একটি বিজ্ঞাপন দেখে—"রাশিয়ায় আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির সুযোগ। থাকা-খাওয়া ফ্রি। নাগরিকত্বের সুযোগ।" কোনো দালালি নয়, কোনো বিপুল খরচ নয়। স্বপ্নটা যেন হঠাৎ করেই হাতের মুঠোয় চলে এলো। রহিম যোগাযোগ করলো। কয়েক সপ্তাহ পর, ভিজিটর ভিসায় সে পা রাখলো মস্কোর মাটিতে। কিন্তু যে স্বপ্ন সে দেখেছিল, সেই স্বপ্নের সাথে বাস্তবের কোনো মিল ছিল না। তাকে বলা হয়েছিল এক কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ। কিন্তু চুক্তিতে সই করার পর তার হাতে তুলে দেওয়া হলো একটি রাইফেল এবং পাঠিয়ে দেওয়া হলো ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে।
রহিমের এই গল্প কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু উন্নয়নশীল দেশের এক নির্মম বাস্তবতা। বেকারত্বের অভিশাপ আজ আর শুধু অর্থনৈতিক সংকট নয়; এটি একটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা সংকটে পরিণত হয়েছে। যে হাতগুলো দেশের অর্থনীতি গড়ার কথা ছিল, সেই হাতগুলো আজ অন্যের হয়ে যুদ্ধ করছে, ভাড়াটে সৈনিক বা ‘মার্সেনারি’ হিসেবে নিজেদের জীবন বাজি রাখছে। এই প্রতিবেদনে আমরা এই ভয়াবহ সংকটের মূল কারণ, এর বিশ্বব্যাপী বিস্তার এবং এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি নিয়ে একটি গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরব।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট – স্বপ্নের মৃত্যু এবং এক অসম লড়াই
বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এই উন্নয়নের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। প্রতি বছর যে লক্ষ লক্ষ তরুণ-তরুণী শিক্ষা জীবন শেষ করে শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে, তাদের জন্য পর্যাপ্ত ও মানসম্মত চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে না।
১. চাকরির বাজারের পরিসংখ্যানগত বিভ্রাট: সরকারিভাবে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার হয়তো ৪-৫ শতাংশের ঘরে দেখানো হয়। কিন্তু এই পরিসংখ্যান বাস্তবতার পূর্ণ চিত্র তুলে ধরে না। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেই একজন ব্যক্তি ‘কর্মরত’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই সংজ্ঞার অধীনে বহু ছদ্ম-বেকার, স্বল্প-বেতনভোগী এবং অস্থায়ী কর্মীকেও পরিসংখ্যানের বাইরে রাখা হয়। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BBS) তথ্য অনুসারেই, দেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি, যা প্রায় ১২ শতাংশেরও ঊর্ধ্বে। প্রতি বছর প্রায় ২০ থেকে ২২ লক্ষ নতুন চাকরিপ্রার্থী শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও, অর্থনীতি তাদের মধ্যে মাত্র কয়েক লক্ষকে শোষণ করতে পারে। বাকিরা পরিণত হয় এক বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীতে।
২. বিদেশে কর্মসংস্থান: এক ব্যয়বহুল মরীচিকা: যখন দেশে চাকরির সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসে, তখন তরুণদের কাছে সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায় ‘বিদেশ’। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণের পথটিও কণ্টকাকীর্ণ এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
দালাল ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য: বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়াটি একটি শক্তিশালী এবং প্রায়ই অনৈতিক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। সরকারিভাবে নির্ধারিত অভিবাসন ব্যয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায় করা হয় শ্রমিকদের কাছ থেকে। যেখানে ভারত বা ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো সরকার-টু-সরকার (G2G) চুক্তির মাধ্যমে অত্যন্ত কম খরচে কর্মী পাঠায়, সেখানে বাংলাদেশের একজন কর্মীকে ১০-১৫ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়, যা একটি পরিবারের জন্য এক বিরাট বোঝা।
ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে যাত্রা: এই বিপুল অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে একজন তরুণকে তার পরিবারের শেষ সম্বল—জমিজমা বিক্রি করতে হয় অথবা চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। এই ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে সে বিদেশে পাড়ি জমায় এবং যে কোনো মূল্যে অর্থ উপার্জনের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এই মরিয়া অবস্থাই তাকে শোষণের জন্য আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
এই পরিস্থিতিতে, যখন দেশে চাকরি নেই এবং বিদেশে যাওয়ার পথও দুর্গম ও ব্যয়বহুল, তখন একজন হতাশ তরুণের সামনে বিকল্পের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। আর এই শূন্যতার সুযোগই নিচ্ছে আন্তর্জাতিক ভাড়াটে যোদ্ধা সংগ্রহকারী চক্রগুলো।
যুদ্ধক্ষেত্রের নতুন রিক্রুট – ‘ইকোনমিক সোলজার’
অতীতে মানুষ যুদ্ধ করতো আদর্শের জন্য, দেশের জন্য বা ধর্মের জন্য। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের সংঘাতগুলোতে এক নতুন ধরনের যোদ্ধার আবির্ভাব ঘটেছে, যাদেরকে বলা যায় ‘ইকোনমিক সোলজার’ বা অর্থনৈতিক সৈনিক। এদের কোনো আদর্শ নেই, আছে শুধু পেটের ক্ষুধা আর পরিবারকে ভালো রাখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
১. রিক্রুটমেন্টের ডিজিটাল ফাঁদ: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই প্রবণতাটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। রাশিয়া, বিশেষ করে ওয়াগনার গ্রুপের মতো প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানিগুলো (PMC), তাদের সৈন্য ঘাটতি পূরণের জন্য বেছে নিয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেকার তরুণদের। তাদের রিক্রুটমেন্টের কৌশল অত্যন্ত আধুনিক এবং ধূর্ত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার: ফেসবুক, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মে আকর্ষণীয় বেতনের চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সেখানে ‘যুদ্ধ’ বা ‘সৈনিক’ শব্দগুলো এড়িয়ে গিয়ে ‘নিরাপত্তা রক্ষী’, ‘সহকারী’ বা ‘নির্মাণ শ্রমিক’ হিসেবে চাকরির লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়।
মিথ্যা প্রতিশ্রুতি: এই চক্রগুলো প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ হাজার ডলার বেতন, রাশিয়ার নাগরিকত্ব, এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিরাপদ দূরত্বে কাজ করার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। একজন বেকার তরুণের কাছে, যার দেশে মাসিক আয় ১৫-২০ হাজার টাকা জোগাড় করাই কঠিন, এই প্রস্তাবটি হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো।
২. বাংলাদেশ থেকে ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে বহু তরুণ এই ফাঁদে পা দিয়ে রাশিয়ায় পৌঁছেছে। সেখানে যাওয়ার পর তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয় এবং একটি রুশ ভাষার চুক্তিতে সই করতে বাধ্য করা হয়। এরপর সামান্য সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্রে, যেখানে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত। ঢাকা ট্রিবিউন, বিবিসি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন বহু বাংলাদেশির করুণ কাহিনী, যারা আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন বা পরিবারকে বাঁচার জন্য আকুতি জানাচ্ছেন।
এটি শুধু বাংলাদেশের গল্প নয় – এক বৈশ্বিক মহামারী
এই সমস্যাটি শুধু বাংলাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত প্রতিটি দেশই আজ এই ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহের উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
নেপাল: নেপালের বহু গুর্খা সৈনিক ঐতিহাসিকভাবে ব্রিটিশ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করে। কিন্তু সেই সুযোগ সীমিত হয়ে আসায় এবং দেশে চাকরির অভাবে, শত শত নেপালি তরুণ রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে গেছে। নেপাল সরকার এই বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও, দারিদ্র্যের কাছে সেই নিষেধাজ্ঞা হার মানছে।
ভারত ও শ্রীলঙ্কা: ভারত থেকেও বহু তরুণ এই ফাঁদে পা দিয়েছে। এমনকি, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের সময়ও বহু প্রাক্তন সৈনিক ভালো বেতনের আশায় ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পাড়ি জমিয়েছিল।
কিউবা, সিরিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলো: রাশিয়া শুধু এশিয়া থেকেই নয়, কিউবা, সিরিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দরিদ্র দেশ থেকেও একইভাবে সৈন্য সংগ্রহ করছে। তাদের কাছে এই তরুণদের জীবন অত্যন্ত সস্তা, নিছকই ‘ক্যানন ফডার’ বা কামানের খোরাক।
এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, বৈশ্বিক সংঘাতের ধরণ বদলে গেছে। এখন বড় শক্তিগুলো নিজেদের দেশের নাগরিকদের জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে, দরিদ্র দেশগুলোর বেকার তরুণদের অর্থের বিনিময়ে কিনে নিয়ে এসে নিজেদের যুদ্ধ চালাচ্ছে। এটি এক নতুন ধরনের উপনিবেশবাদ, যেখানে মানুষের জীবনই পণ্যে পরিণত হয়েছে।
পরিণতি – এক বহুমুখী বিপর্যয়
বেকারত্বের কারণে তরুণদের ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে যুদ্ধে যোগদান করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ এবং বহুমুখী।
মানবিক বিপর্যয়: যারা যুদ্ধে যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই ফিরছেন না। যারা ফিরছেন, তারা হয় শারীরিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে ফিরছেন, নয়তো যুদ্ধাপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগের বোঝা মাথায় নিয়ে ফিরছেন। তাদের পরিবারগুলো হারাচ্ছে তাদের একমাত্র অবলম্বন, দেশ হারাচ্ছে তার সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ।
কূটনৈতিক সংকট: এই বিষয়টি দেশগুলোকে এক বিরাট কূটনৈতিক সংকটের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। যেমন, বাংলাদেশ বা নেপালকে এখন রাশিয়ার মতো একটি শক্তিশালী দেশের সাথে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য অত্যন্ত জটিল এবং সংবেদনশীল আলোচনা চালাতে হচ্ছে। এটি দুই দেশের সম্পর্কের উপরও ফেলছে নেতিবাচক প্রভাব।
বৈশ্বিক নিরাপত্তার হুমকি: প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি এবং ভাড়াটে যোদ্ধাদের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইন ও জেনেভা কনভেনশনের পরিপন্থী। এই প্রবণতাটি সংঘাতকে আরও দীর্ঘস্থায়ী এবং নৃশংস করে তোলে। যখন অর্থের বিনিময়ে যোদ্ধা পাওয়া যায়, তখন শান্তি আলোচনার পথ আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
উত্তরণের পথ – কোথায় সমাধান?
এই জটিল সংকট থেকে উত্তরণের জন্য কোনো একক বা সহজ সমাধান নেই। এর জন্য একটি সমন্বিত এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
১. অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে:
মানসম্মত কর্মসংস্থান সৃষ্টি: শুধুমাত্র জিডিপি প্রবৃদ্ধি নয়, সরকারকে এখন ‘কর্মসংস্থান-কেন্দ্রিক’ প্রবৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। শ্রম-নিবিড় শিল্প এবং আধুনিক প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে তরুণদের জন্য মানসম্মত চাকরির সুযোগ তৈরি করতে হবে।
দক্ষতা উন্নয়ন: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাজারের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপর সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে, যাতে তরুণরা শুধুমাত্র ডিগ্রির জন্য না পড়ে, বরং দক্ষতার জন্য পড়ে।
অভিবাসন ব্যবস্থার সংস্কার: বিদেশে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়াকে দালাল এবং সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হবে। সরকার-টু-সরকার (G2G) পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করতে হবে এবং অভিবাসন ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।
ব্যাপক জনসচেতনতা: ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধে যোগদানের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।
২. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে:
কূটনৈতিক চাপ: যে সকল দেশ ভাড়াটে যোদ্ধা ব্যবহার করছে, তাদের উপর আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ: প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি এবং ভাড়াটে যোদ্ধা নিয়োগের বিরুদ্ধে যে আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে, তার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
রহিমের মতো লক্ষ লক্ষ তরুণ আজ এক কঠিন চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে। তাদের সামনে একদিকে দেশের অভ্যন্তরে বেকারত্বের হতাশা, অন্যদিকে বিদেশের মাটিতে মৃত্যুফাঁদ। একটি দেশের জন্য এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে? বেকারত্বের এই সংকটকে যদি শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখা হয়, তবে সেটি হবে এক বিরাট ভুল। এটি একটি মানবিক সংকট, একটি সামাজিক সংকট এবং সর্বপরি, একটি জাতীয় নিরাপত্তা সংকট। সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এখনই এই সমস্যার মূল উৎপাটনে মনোযোগ না দেয়, তবে আগামী দিনে আমাদের আরও বহু তরুণের লাশ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যে দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ তার তরুণ জনশক্তি, সেই দেশের তরুণদের এভাবে হারিয়ে যেতে দেওয়াটা এক ক্ষমার অযোগ্য ব্যর্থতা।