সাইকেলের বিয়ে

0

নওশাদপুর গ্রামে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। গ্রামে একজনও ছিল না যে সাইকেল চালাতে পারে না। কিন্তু সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের ব্যাপার— গ্রামের একমাত্র লাল রঙের সাইকেলটাকে সবাই “রাজসাইকেল” বলে ডাকত।

এই সাইকেলটা একসময় হেলাল চেয়ারম্যানের ছিল। তিনি যখন বাজারে যেতেন, তখন মানুষ সরে দাঁড়াত, যেন সাইকেলের জন্য রাস্তা ফাঁকা করে দিতে হয়। এতটাই দাপট ছিল।

কিন্তু হঠাৎ একদিন খবর রটল— রাজসাইকেলের বিয়ে হবে।

হ্যাঁ, একেবারে সাইকেলের বিয়ে!

ঘটনার শুরু হলো বাচ্চাদের মধ্যে। গ্রামের ছেলেপেলেরা খেলতে খেলতে বলে উঠল,
“আমাদের সাইকেলের বউ নাই, আমরা ওকে বিয়ে দিই।”

কথা মুখে আসতেই পুরো গ্রামে হৈচৈ। অনেকে হাসল, আবার কেউ কেউ সিরিয়াস হয়ে গেল। হেলাল চেয়ারম্যানও মজা করে বললেন,
“হ্যাঁ, রাজসাইকেল তো এখন বয়সী, একটা বউ আনা দরকার।”

এবার শুরু হলো প্রস্তুতি।

গ্রামের মেয়েরা লাল সাইকেলটাকে ধুয়ে-মুছে সাজাতে লাগল। চাকা ঘষে এমন চকচক করানো হলো, যেন আয়নায় মুখ দেখা যায়। হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো ফুলের মালা। সামনে বাঁশ দিয়ে বানানো হলো কৃত্রিম মুকুট।

এখন প্রশ্ন উঠল— সাইকেলের বউ হবে কে?

কেউ বলল,
“আমার মামাতো ভাইয়ের মোটরসাইকেল আছে, ওইটার সাথে বিয়ে দেওয়া যাক।”

অন্যরা বলল,
“না না, মোটরসাইকেল খুব দামি, মানাবে না। রাজসাইকেলের জন্য দরকার সাদামাটা, একেবারে দেশি টাইপ বউ।”

শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো— পাশের গ্রামের এক পুরনো নীল রঙের সাইকেলকে বউ বানানো হবে। সেই সাইকেল এত পুরনো যে, হ্যান্ডেলের ঘন্টি বাজালে ‘টিং’ না হয়ে হয় ‘টাং’।

তবুও সিদ্ধান্ত হলো— এটাই হবে রাজসাইকেলের বউ।

বিয়ের দিন গ্রামে মেলা বসলো। ডেকোরেশনের কাজ করলো কামাল মিস্ত্রি, যিনি জীবনে কখনও সাইকেলের জন্য প্যান্ডেল বানাননি। তবুও বাঁশ আর কাপড় দিয়ে এক বিশাল সাজসজ্জা দাঁড় করালেন।

বিয়ে পড়ালেন গ্রামের ইমাম সাহেব। তিনি মজা করে কাবিননামা লিখলেন—
“রাজসাইকেল এক টাকার বিনিময়ে নীল সাইকেলকে কবুল করল।”

গ্রামের সবাই হেসে কুটি কুটি। কেউ বলল,
“এই বিয়ে করলে তো রাতের বেলা সাইকেল নিজেরাই পালাবে।”
আবার কেউ বলল,
“শিশির পড়লে তো ওদের হানিমুন হয়ে যাবে।”

বিয়ের পর আয়োজন হলো ভোজের। খিচুড়ি, মাংস, ডিম— সব খাওয়া শেষ হলে দেখা গেল রাজসাইকেলের এক চাকা হাওয়াই নেই। সবাই বলল,
“বউ দেখেই বেচারা লজ্জায় হাওয়া ছেড়ে দিল।”

এরপর শুরু হলো নতুন ঝামেলা। হেলাল চেয়ারম্যান ঘোষণা দিলেন,
“যেহেতু রাজসাইকেলের বিয়ে হলো, তাই আর একা চালানো যাবে না। চালাতে হলে দুটো একসাথে চালাতে হবে।”

ফলে গ্রামে অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল— একসাথে দুটো সাইকেল জুড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। সামনে রাজসাইকেল, পিছনে বউসাইকেল। যাকে-তাকে দেখে মনে হয় যেন শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে।

এই দৃশ্য দেখে পাশের গ্রামের লোকেরা বলল,
“তোমাদের গ্রাম একেবারে পাগলখানা। সাইকেলের বিয়েও হয় নাকি!”

কিন্তু নওশাদপুরের মানুষ গর্ব করে বলল,
“আমাদের গ্রামে যা হয়, সেটা গোটা দুনিয়ায় হয় না।”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Out
Ok, Go it!