প্রবাস মানেই সংগ্রাম, আবার প্রবাস মানেই অভিজ্ঞতার ঝাঁপি। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতার মাঝেও এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যেগুলো মনে হলে এখনও হাসি পায়। আজকে শেয়ার করবো এক রম্য অভিজ্ঞতা, যা ঘটেছিল আমাদের ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে, আর সেটা ঘিরে ছিল এক কাবাবের গল্প।
১. প্রবাস জীবনের রান্নাঘরের যুদ্ধ
প্রবাসীরা অফিসের পর সবচেয়ে বড় যুদ্ধে নামে রান্নাঘরে। কেউ কেউ ইউটিউব দেখে রান্না শেখে, কেউ ফোনে মায়ের কাছে রেসিপি শোনে। আমিও ব্যতিক্রম নই। প্রথম প্রথম ডিমভাজি করতে গিয়ে ডিম ফাটাই, তেল ফোটে, কিন্তু ডিমটা প্যানে পড়ার বদলে ফ্লোরে পড়ে যায়। বন্ধুরা হেসে বলে, “দোস্ত, তুই রান্না না, হাড়ি-পাতিলের ওপর খুন করার চেষ্টা করছিস।”
২. কাবাবের স্বপ্ন
একদিন রাতে ফ্ল্যাটমেট সবাই মিলে ঠিক করলাম, আজ কাবাব বানানো হবে। ইউটিউবে দেখে মনে হলো, ব্যাপারটা খুব সহজ। “গরুর মাংস, মসলা আর কাঠিতে গেঁথে দিলেই হয়ে যাবে”— ভিডিওতে এতই সহজ লাগছিল।
আমরা গর্ব করে বললাম, আজ রাতের মেনু হবে ‘কাবাব নাইট’। মাংস কিনলাম, মসলা মাখালাম, ইউটিউবের মতো করে কাঠিতে গেঁথে দিলাম। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের ফ্ল্যাটে কোনো গ্রিল নেই। তাই আমরা ওভেনে ঢুকালাম।
৩. ধোঁয়ার কাণ্ড
কিছুক্ষণ পর রান্নাঘরে ধোঁয়া। ধোঁয়া এলার্ম বেজে উঠল। পুরো বিল্ডিংয়ের লোক ভেবেছে আগুন লেগেছে। নিচের তলার এক ফিলিপিনো দৌড়ে এসে বলল, “Fire! Fire!” আর আমরা দাঁড়িয়ে কাবাবের কাঠি হাতে।
যত না কাবাব পুড়েছে, তার চেয়ে বেশি আমাদের মুখ পুড়েছে লজ্জায়। কিন্তু তবুও কাবাব খাওয়া হলো। যদিও স্বাদ ছিল— "জ্বলে যাওয়া কয়লার মতো"।
৪. হাসি আর কান্না একসাথে
ফ্ল্যাটমেটরা সেই দিন থেকে আমাকে কাবাব মাস্টার বলে ডাকে। এখনো অফিস থেকে ফিরে মাঝে মাঝে ফ্ল্যাটে কাবাব বানানোর কথা উঠলে সবাই হেসে গড়াগড়ি খায়। আর আমি বলি— "প্রবাস জীবন কষ্টের হলেও, মাঝে মাঝে এই রম্য ঘটনা আমাদের জীবনকে হাসিতে ভরে দেয়।"
প্রবাস মানেই শুধু দুঃখ নয়, এর মধ্যে মজাও আছে। কাবাবের ধোঁয়ার মতোই ছোটখাটো ভুল আমাদের জীবনের বড় স্ট্রেসকে কিছুক্ষণের জন্য ভুলিয়ে দেয়।